সাহস এর ভাষা শিক্ষার বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রাসঙ্গিকতা

১১ই নভেম্বর ২০০৪ দিনটি ছিলো আমার জীবনে দুঃস্বপ্নের মতো। আমার মেয়ের বয়স তখন ১ বছর ৮ মাস তখন আমাদের অজানা আশংকা সত্যে প্রমাণিত হলো। প্রমাণিত হলো যে সে জন্মবধির। এক অব্যক্ত যন্ত্রনা মনে নিয়ে পরিত্রানের পথ খুজছিলাম। নিজেকে পরাজিত, হৃতসর্বস্থ মনে হতো।

ইতিমধ্যে এক পত্রিকায় সাহস এর পরিচয় পেলাম। দিন টি ছিলো কোনো এক মাসের দ্বিতীয় রবিবার। মনে সংশয় নিয়ে এলাম সাহস এ। অন্যান্য বধির শিশুসন্তানদের মুখরিত দেখে প্রথম দিনেই এক অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভব করলাম। সেদিনই বুঝেছিলাম আমার মিথ্যে আশঙ্কার কোনো অর্থ নেই। মেয়ের মুখে মা বাবা ডাক যে আমরা শুনতে পাবো তা সেদিনই নিশ্চিন্ত হয়ে গেলো।

এর পর শুরু হলো সঠিক পদ্ধতিতে আমার প্রশিক্ষণ পর্ব। প্রয়োগ করলাম নিজ সন্তানের ওপর। সাহস এর এই ভাষা শিক্ষার বিশেষ প্রশিক্ষণ যে কতটা প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ তা আমার মতো মায়েরা সঠিক ভাবে অনুধাবন করেছেন। এই প্রশিক্ষণ ভাষা শিক্ষার সাথে সাথে অন্যান্য দিকেও সফলতা আনে। মনে পরে, প্রশিক্ষণের মাত্র চার মাস পরেই ঐশানি প্রথম শব্দ ‘পা’ বলেছিল।

দীর্ঘ ১২ বছরের কর্মযুদ্ধে অনেক সফলতার ছোঁয়া পেয়েছি নিজ কন্যাকে ঘিরে। স্বাভাবিক জীবন সে ফিরে পেয়েছে। ফিরে পেয়েছে স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে প্রথাগত বিদ্যা-শিক্ষার সুযোগ। এখন সে নবম শ্রেণীর ছাত্রী। এর পাশে মা-ডাক শোনার এক আকাশ আনন্দ পেয়েছি। নিজ সন্তানের মুখে হাজারও শব্দ যখন ঘোড়া ফেরা করে, প্রয়োজনে ঝগড়া করে, তর্ক করে, জানার ইচ্ছে প্রকাশ করে, সত্যি-মিথ্যে, ঠিক-ভুল বিচার করে তখন কোথাও না কোথাও নিজেকে তৃপ্ত মনে হয়। এসব কিছু করারই তো কথা ছিল না। নীরবতাই তো তার ছিল নিশ্চয়তা।

অসম্ভবকে সম্ভব যাঁরা করতে পারেন তাঁরাই তো আমার কাছে ঈশ্বর স্বরূপ। তাই সাহস মন্দিরের দেবতার চরণে শতকোটি প্রণাম। সাহস আরও অগুনতি অভিভাবকদের প্রাণ হয়ে উঠুক এই প্রার্থনা করি।

পায়েল সরকার ও বাসব সরকার,

আসানসোল, পশ্চিম বঙ্গ