অনু রেনুর কথা

আমি অমল কুমার রায়। আসানসোলে থাকি। আমার দুই কন্যা অয়ন্তীকা (অনু) ও অরিত্রিকা (রেনু)। এরা দুজনেই জন্ম-বধির। ১৯৯৫ সালে অনুর জন্ম হয়। তিন মাস বয়সেই জানতে পারলাম ও শুনতে পায় না। এ ডাক্তার, সে ডাক্তার, ওঝা, মৌলবি, তান্ত্রিক, মন্দির, মসজিদ কিছুই বাকি রাখলাম না। ভারতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই – সব জায়গায় একই কথা, ও কথা বলতে পারবে না। হতাশা নিয়ে তিনটি বছর কাটালাম।

তিন বছর পর আমার এক পরম আত্মীয়ের কাছে দুর্গাপুরে জাজোদিয়া পরিবারের খোঁজ পেলাম। তখনও ‘সাহস’-এর নামকরণ হয়নি। ১৯৯৮ সালে ‘সাহস’-এ ট্রেনিং নিতে শুরু করলাম। ঐ বছরেই ছোট মেয়ে রেনুর জন্ম হল। সেও বদ্ধ কালা। ভাবলাম দুটো মেয়েই বোবা কালা – আমার পরিচয় হবে বোবা কালার বাবা। কিন্তু সব দুঃখের সাথেই একটু সুখের জায়গা থাকে। তাই বুঝি ঐ জাজোদিয়া দম্পতির সাথে আমার দেখা হল। আর অন্য কোথাও ঘুরতে হল না। ‘সাহস’ থেকে যা শিখলাম মেয়েদের সাথে সে ভাবে কাজ করে যেতে লাগলাম। যদিও ৫০% করতে পেরেছি কিনা সন্দেহ আছে।

আজ অনু রেনু দুজনেই বি.এ. পাশ করেছে সাধারণ স্কুল ও কলেজ থেকেই। আজ মেয়েরা একা একাই বাজার হাট, নাচ, গাড়ি চালানো বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ ছেলে মেয়েদের থেকে কম কিছুতেই নেই। এজন্য ‘সাহস’ আমাকে সব সময় সাহস ও উৎসাহ দিয়েছে। আজ অনু ও রেনুর বাবা হতে পেরে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয়। এসব ‘সাহস’-এ  যুক্ত হতে পারায় সম্ভব হয়েছে। আমি ‘সাহস’-এর কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

ইন্দ্রানী ও অমল কুমার রায়,

আসানসোল, পশ্চিম বঙ্গ