সাহস আমাদের মতো মা – বাবাদের কাছে মন্দির। আমার এক দাদা আমাদের সাহসের খবর দেয়। তখন আমার ছেলে জয়মাল্য আমাকে মা বলে জানতো না আর বলতও না। আমরা যখন প্রথম সাহসে আসি তখন স্যার বলেছিলেন যে সব ঠিক হয়ে যাবে; শুধু বাঁচার জন্য খেতে হবে, খাবার জন্য নয়; বাচ্চাকে অনেকটা সময় দিতে হবে।
তখন স্যার আর ম্যাডাম আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। আমার জীবনে স্যার-ম্যাডামের অবদান অনেক। আমি সাহসে এসে মা হয়েছি। তার আগে আমি শুধুমাত্র আমার ছেলের আয়া ছিলাম। আমার ছেলে তখন কিছুই পারতো না; না পারতো খেতে , না বলতে , না ভালো করে ছুটতে আর নাই সে লোকজনের মাঝে যেতে ভালোবাসতো।
ম্যাডাম খুব সুন্দর করে ছোট ছোট জিনিস, একটা একটা করে ছবি দিয়ে বোঝান। বাচ্চাকে কোনো বিষয় ধারণা দেয়ার জন্য কিভাবে কাজটা করলে ভালো হবে সেটি খুব সহজেই ব্যাখ্যা করে দেন। ছোট – বড় আমাদের সব কথা শোনা, বোঝা, উপায় বার করে দেওয়া, কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজর রাখা, যতক্ষণ কাজটা ঠিকঠাক না হচ্ছে ততক্ষন আমাদের সাথে লেগে থাকা – এ বোধহয় শুধু ম্যাডাম এর পক্ষেই সম্ভব। আর আমাদের স্যার ও তার হাসি হচ্ছে আমাদের সব সমস্যার ওষুধ। স্যার , আপনি আমাদের মানুষ করে দিলেন। এরম ভাবেও যে বাঁচা যায়, স্বপ্ন দেখা যায়, আমাদের এই তথাকথিত “প্রতিবন্ধী” শিশুদের জন্যও যে সমাজে একটা জায়গা করে দেওয়া যায় – আপনিই আমার জীবনে এই পথের দিশারী।
আমাদের সামাজিক পরিকাঠামো অনুযায়ী বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই শুধু রাঁধো, খাওয়াও আর শ্বশুরবাড়ি সামলাও । কিন্তু ছেলের সাথে খেলতে খেলতে, ছুটতে ছুটতে, কাগজ কাটতে কাটতে যেন আজ আমি আমার শৈশব ফিরে পেয়েছি। লোকে অনেক কথাও শুনিয়েছে , কিন্তু ওসব শোনার সময় ছিল না। কারণ সাহস আমাদের জীবনটা এতো সুন্দর ভাবে ঘিরে ফেলেছে যে অন্য সব কথার জন্য সময় কম পড়ে যায়। স্যার বলেন, ” আমি আছি…কোনো চিন্তা নেই; খালি ছেলের সাথে কাজ করে যাও” – এ যেন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্বাসবাণী।
এখন আমার ছেলে জয়মাল্য ক্লাস থ্রি তে পড়ে, একটা বড় স্কুলে যায়। ওর ক্লাসে ৫০ জন বাচ্চা আছে। তাদের সাথে ও সকাল ৭:৩০ থেকে দুপুর ১:৩০ পর্যন্ত থাকে। নিজেই টিফিন, জল খায়। স্কুলে ম্যাডাম বোর্ডে যা লেখায় তার প্রায় সবটাই লিখে আনে। ম্যাডামরা সকলে ওকে খুব ভালোবাসে। ও এখন গান শেখে। গানের দুটো পরীক্ষা দিয়েছে। এখনো অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু প্রতি পদে সাহস আমাদের পাশে আছে। আমার বিশ্বাস সাহসের সাহসেই আমরা এগিয়ে যাবো এবং জয়মাল্যর গলায় একদিন বিজয়মাল্য উঠবে।