সাহস-এর সঙ্গ

সাহস এর সাথে আমার পরিচয় ৪ মাস, আর আমাদের মেয়ের বয়স এখন ১০ মাস। আমাদের মেয়ের বয়স যখন সাড়ে তিন মাস, আমার শ্রী আমাকে প্রথম জানায় যে মেয়ে হয়তো শুনছে না। শুরু হল পরীক্ষা নিরীক্ষা। BERA ও ASSR করে প্রমাণিত হল যে আমাদের সন্তানের Severe to Profound Hearing Loss আছে। বিভিন্ন ENT ডাক্তার, Speech Therapy Centre এর চক্রব্যহে পড়ে যখন মনস্থির করতে পারছিনা, Cochlear Implant করানো উচিত হবে কি না, তখনই সাহস এর খোঁজ পেলাম। আমার একজন পরিচিত যে মেদিনীপুরে থাকে – তার ছেলেও বধির। কিন্তু সাহস এ গিয়ে ওঁদের শিশুর ভাষার বিকাশের জন্য প্রদত্ত অভিভাবকদের ট্রেনিং নিয়ে সেই বধির শিশু আজ কথা বলছে। আমরা আর দেরি করিনি। সাহস এ যোগাযোগ করলাম। প্রথম আশ্বস্ত হলাম যে Cochlear Implant না করেও শুধু মাত্র Hearing Aid এর সাহায্যে বাচ্চা শুনবে এবং বধির শিশু যদি মেশিন দ্বারা শুনতে পায় এবং সেই শিশুদের যদি বাবা মা সঠিক পদ্ধতিতে ভাষা শেখাতে পারে তবে বধির শিশুও কথা বলবে। এই বিশ্বাস সাহস আমাদের মনে গেঁথে দিলো। সেই বিশ্বাস এ ভর করে আমরা ৭ দিনের Parent Training Class করলাম। তার সাথে প্রতি মাসের দ্বিতীয় রবিবার সব অভিভাবকদের নিয়ে সভা, যেখানে মূল মন্ত্র একটাই – কেউ একা নয়, সবাই সবার পাশে আছে। উপযুক্ত মেশিন ব্যবহার করে সাহস এ শেখা শিক্ষা অনুসরণ করে আমরা আমাদের ১০ মাসে কন্যা তরঙ্গী কে ভাষা শিক্ষা করাচ্ছি।

পৃথিবী জোড়া ব্যবসা চলছে, বধির শিশুর অসহায়তা বিক্রি হচ্ছে, বাবা মায়ের চোখের জল ঠান্ডা হয়ে বরফ হচ্ছে আর মানবিকতা মুছে যাচ্ছে মুনাফার ছায়ায়। সেখানে পৃথিবীর আলো দেখা ভালোবাসা মাখা সহজ মুখটা কেমন যেন ঢেকে গেছে অর্থলোলুপ দৃষ্টির করাল অন্ধকারে। সেই অন্ধকার সরিয়ে নতুন সূর্যোদয় আনছে সাহস! এই সাহস আত্মবিশ্বাস শেখায় – শেখায় নতুন উদ্যমে সমস্ত বাধা পেরিয়ে এক বধির শিশুর জীবনের জয়গান করতে।

স্বেতা দাস ও ডাঃ তিতাস দাস,

কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ